নিহিন গ্রহ

“আমি যাব না ইয়ুরিআমাদের বাবুর ভবিষ্যৎ কি হবে?”
“চিন্তা করো না, উস্পিতা। আমাদের অভিযান শেষ হলেই তো আমরা আবার পৃথিবীতে ফিরে আসব।”
“কেন ক্যাপ্টেন টিলিটি তোমাকেই সিলেক্ট করলেন? অন্য আরও কত বিজ্ঞানী ছিলেন, তারাও তো যেতে পারতেন।”
“কারণ, আমার বয়স সবচেয়ে কম এবং আমাদেরই নতুন বাবু হবে। ক্যাপ্টেনের ইচ্ছা এবারের অভিযানে আমাদের মত কেউ যাক। নিহিন গ্রহে পৌঁছাতে কমপক্ষে সাত বছর লাগবে। আর ওখানে যদি সত্যিই মানুষের মত প্রজাতি থাকে তাহলে  ওদের জীবনযাত্রা জানার জন্য আরও ছয় মাস থাকতে হবে। তারপর আমাদের কাজ শেষ। কিন্তু মানুষের মত কেউ না হয়ে যদি অন্য প্রাণী হয়, তাহলে কতদিন থাকা লাগবে বলা মুশকিল। আর ফিরে আসতে আরও সাত বছর লাগবে। রোবট সুন এর তথ্য অনুযায়ী, নিহিন গ্রহের বাসিন্দারা খুব শান্তিপ্রিয়। কিন্তু একটা টেকনিকাল ঝামেলার জন্য রোবট সুন এর ক্যামেরাটা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা বুঝতে পারছিনা, ওরা দেখতে কেমন। রোবট সুন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা তথ্য দিয়েছে, ওরা বাচ্চা ছেলেমেয়ে কে অনেক ভালবাসে। এই জন্যই আমাদের যেতে হচ্ছে।”

মহাকাশযান ‘মিলিসা’র জানালার পাশে বসে এসব কথা ভাবছে, উস্পিতা। আজ থেকে এক বছর তিন মাস আগের কথা। আজ ওদের মেয়ে লিসানার প্রথম জন্মদিন। অথচ মহাকাশযানের ভিতর কেক কেটে আনন্দ করার কোন সুযোগ নাই। ওদের খাবার হল প্রতি তিন বেলা একটা করে ভিটামিন ক্যাপসুল। এখন ওরা যদি পৃথিবীতে থাকত, তাহলে কতই না ধুমধাম করে লিসানার জন্মদিন পালন করতে পারত।

 “আম্মু, আম্মু,” লিসানার ডাক শুনে বাস্তবে ফিরে এলো উস্পিতা।  
জানালা দিয়ে কালো আকাশ ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না, তাই লিসানার ডাক শুনে উস্পিতা খুশি হল।
ছোট্ট লিসানা মাত্র হাঁটতে শিখেছে। হাঁটতে হাঁটতে মহাকাশযানের এমন সব জায়গায়ে চলে যায়, যেখানে ওরা কখনো যায়নি। আজও লিসানা উস্পিতার হাত ধরে নিয়ে গেল এক জায়গায়। উস্পিতা আগে এই রুমে আসেনি। এটা একটা ইনফরমেশন রুম। ওরা এই এক বছরে কি কি করেছে, তার রেকর্ড আছে এই রুম এর কম্পিউটারে। এমনকি লিসানা কখন, কোন রুমে যাচ্ছে তারও রেকর্ড রয়েছে।
লিসানা কে দেখাশোনা করার জন্য রোবট জিনিমা আছে। ও যখন যেখানে যায়, জিনিমাও ওর সাথে যায়। উস্পিতা জিনিমার কাছ থেকে জানতে পারল, এই সব রেকর্ড নিহিন গ্রহের বাসিন্দাদের দেখানোর জন্য রাখা হচ্ছে বিশেষ করে একটা বাচ্চা কিভাবে বড় হয়, সারাদিন কি করে, সেটা দেখানোর জন্য এত আয়োজন।

উস্পিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ওফ! নিহিন গ্রহের বাসিন্দাদের জন্য ওদের কত ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে! এই একটা বছর যে কিভাবে কেটেছে, ও নিজেও জানে না। সে ছিল স্বাধীনচেতা একটা মেয়ে। যখন যেখানে খুশি, ঘুরতে চলে যেত। আর এখানে তাকে বন্দি জীবনযাপন করতে হচ্ছে। বিদ্রোহী হয়ে উঠতে চায় উস্পিতার মন। কিন্তু কেউ না কেউকে তো স্যাক্রিফাইস করতেই হবে। এই কথাটা ভেবে আবার শান্ত হয়ে যায় ওর মনটা।

 নিহিন গ্রহের বাসিন্দারা যে ভাষা তে কথা বলবে, তার কম্পাংক অনুযায়ী একটা ভাষা ব্যবহার করার সিস্টেম আছে ইনফর্মেশন রুমে। এই ঘটনাগুলো সেই ভাষাতে রূপান্তর করে বাসিন্দাদের শোনানো হবে।
সন্ধ্যাবেলায়, (যদিও মহাকাশে বুঝা যায় না, কখন সকাল আর সন্ধ্যা, ঘড়ির সময় বলছে – এটা সন্ধ্যা ) লিসানার জন্য ছোট একটা বার্থডে পার্টির আয়োজন করল, ইয়ুরি আর উস্পিতা। উস্পিতার মনে মনে হাসি পেল আবার একই সাথে দুঃখও লাগল! ধুর! কিসের বার্থডে পার্টি এটা! কয়েকজন রোবট, ওরা তিনজন আর হলগ্রাফিক স্ক্রীন এ পৃথিবী থেকে ওদের সাথে অংশ নেয়া কয়েকজন বিজ্ঞানী। না আছে কোন মোমবাতি, না আছে কেক... শুধু আছে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার ব্যবস্থা আর রোবটদের বানানো কিছু উপহার...

“ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু লিসানা, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,”  ইয়ুরি আর উস্পিতার সাথে সুর মেলাল রোবট, বিজ্ঞানীরা। ছোট্ট লিসানা খুশিতে হাততালি দিতে লাগল।
লিসানার প্রথম জন্মদিন এভাবেই শেষ হয়।
সময় কেটে যেতে থাকে...। লিসানা বড় হতে থাকে...।
আস্তে আস্তে লিসানার বয়স চার বছর পূর্ণ হল। এরই মধ্যে সে বর্ণমালা, ছোটোখাটো যোগ, বিয়োগ শিখে ফেলেছে। উস্পিতা আর ইয়ুরি, লিসানা কে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে লাগল... লিসানা পৃথিবীতে গিয়ে অনেক ভাল করবে পড়াশুনায়। ওদের মত বিজ্ঞানী হবে...।

লিসানার সাত বছর পূর্ণ হতে হতে সে, সৌরজগৎ কি, মহাবিশ্ব এসব আরও অনেক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে ফেলল। ওদের মহাকাশযানের কোথায় কি আছে সব ওর নখদর্পণে। এমনকি ওরা কেন, কোথায় যাচ্ছে, রোবট সুন এর কথা, সে যে আর ফিরে আসেনি, সব তাকে জানানো হয়েছে। লিসানার সব কিছু বুঝে নেয়ার ক্ষমতা দেখে ওর মা-বাবা অবাক হয়ে যায়।  
উস্পিতা আর ইয়ুরি, লিসানার সপ্তম জন্মদিন পালন করল। এর কিছুদিন পরের কথা... লিসানা, ওর মা-বাবার সাথে গল্প করছে। একসময় সে বলল, “জানো, আমার মনে হচ্ছে, এই কয়েকদিনের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তোমরা যে পৃথিবীর গল্প আমাকে শুনিয়েছ, ওখানে আমরা হয়ত আর যেতে পারব না।”

উস্পিতা, ইয়ুরি এমন অদ্ভুত কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। ইয়ুরি বলল, “না, মা। এটা তোমার এমনি মনে হচ্ছে। নিহিন গ্রহে আমাদের কাজ শেষ হলেই আমরা চলে যাব। আমাদের আসতে যদিও সাত বছর লেগেছে, কিন্তু যেতে এর চেয়ে কম সময় লাগতে পারে আবার নাও লাগতে পারে। তুমি ততদিনে অনেক বড় হয়ে যাবে। পৃথিবীতে ফিরে আমরা তোমাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিব। তুমি পড়ালেখা করে আমাদের মত বিজ্ঞানী হবে।”
লিসানার মন তবুও মানতে চায় না। ছোট হলে কি হবে, ও অনেক কিছু বুঝতে পারে।
এক মাস কেটে গেল। নতুন কোন ঘটনা ঘটল না। এখন সবাই খুব অস্থিরতার মাঝে আছে। যেকোনো সময় নিহিন গ্রহে ল্যান্ড করবে, ওদের মহাকাশযান ‘মিলিসা’।

লিসানার মন সবথেকে বেশি অস্থির। ওর মনে হতে লাগল, কোথাও কোন কিছু একটা ঠিক নেই। কিন্তু কি সেটা, তা বুঝতে পারল না।

অনেক কষ্টে রাতে ঘুমাল ও। এর পরদিন সকাল...।

লিসানার ঘুম ভাঙল সবার আগে। ঘড়ি দেখে বুঝল, এখন ভোর ছয়টা। খুব অস্থির লাগতে থাকে ওর। রোবট জিনিমা কে ডাকল, কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। বিছানা থেকে নেমে জুতো পরে হাঁটতে হাঁটতে ‘মিলিসা’র মেইন গেটের জানালার পাশে আসল লিসানা। জানালাটা ওর থেকে উঁচুতে বলে, একটা টুল রাখা আছে ওখানে, যাতে ও টুলে দাঁড়িয়ে বাইরের কালো আকাশে তারা দেখতে পারে। ঘুম থেকে উঠেই লিসানা এই জায়গায়ে আসে। আজও সে টুলের উপর দাঁড়াল, তারা দেখবে বলে। কিন্তু জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েই ও অবাক হয়ে গেল। কোথায় তারা! বাইরে তো সাদা আকাশ দেখা যাচ্ছে, ঠিক যেমন পৃথিবীর ছবি দেখেছে তেমন! একবার ভাবল মা-বাবা কে ডাক দিবে, তারপর ভাবনাটা বাতিল করে দিল ও। টুল থেকে নেমে ভাবল, দরজা খুলে বাইরে যাবে। উত্তেজনায় কাঁপছে লিসানা। বুঝে গেছে সে, নিহিন গ্রহে ওরা ল্যান্ড করেছে। রোবট জিনিমা ওকে দরজা কিভাবে খুলতে হয় শিখিয়ে দিয়েছিল।
ইনফর্মেশন রুমে গেল ও। এটা যে বিপজ্জনক একটা কাজ, এটা বুঝতে পারল না। খুব দ্রুত মেইন গেটের বাটন গুলো টিপল। খুলে গেল দরজাটা। ইনফর্মেশন রুম থেকে বেরিয়ে দেখল ও দরজা খোলা। খুশি হল ও। বেরিয়ে গেল খোলা দরজা দিয়ে!

বাইরে পা দেয়ার সাথে সাথে দমকা হাওায়ায় লিসানার এলো চুল উড়তে লাগল।  এমন বাতাসের সাথে ও পরিচিত না, তাই একটু ভয় পেল সে। কিন্তু অজানাকে জানার কৌতূহল দমন করতে পারলো না ও।

‘মিলিসা’ কে বাইরে থেকে দেখতে কেমন লাগে, তার ছবি দেখেছে লিসানা। পিছন ফিরে একবার তাকাল ‘মিলিসা’র দিকে। ঠিক ছবির মতই দেখতে মহাকাশযানটা। এরপর সামনে এগিয়ে যেতে থাকে লিসানা। কিছু দূরে ও ‘মিলিসা’র মত কি যেন একটা জিনিস দেখতে পেল। এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেল, ওটাও একটা মহাকাশযান। অনেকটা ‘মিলিসা’র মত কিন্তু একটু ছোট।  

এদিকে উস্পিতা ঘুম থেকে উঠে লিসানাকে ওর রুমে পেল না। রোবট জিনিমা কে জিজ্ঞেস করার জন্য জিনিমাকে খুঁজতে লাগল। জিনিমার এখন ইনফর্মেশন রুমে থাকার কথা। কিন্তু কিছু দূর গিয়ে উস্পিতার মুখ দিয়ে অস্ফুট চিৎকার বেরিয়ে এলো। জিনিমা এবং আরও কিছু রোবট মেঝেতে পড়ে আছে! উস্পিতার চিৎকার শুনে ইয়ুরি তাড়াতাড়ি ওর কাছে আসল। দুজন দুজনের মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ইয়ুরি বলল, “লিসানা কোথায়? ও তো এই সময় তারা দেখায় ব্যস্ত থাকত।” “আরে তাইতো! আমার মনেই ছিল না,” বলল উস্পিতা। মেইন গেটের কাছে এসে ওদের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। গেট খোলা, পৃথিবীর মত আকাশ দেখা যাচ্ছে ! কিন্তু লিসানা কোথায়?

গেটের বাইরে পা রাখতে না রাখতেই একদল রোবট ওদের ঘিরে ধরল। পরিষ্কার বাংলায় বলল, “তোমাদের মেয়ে আমাদের কাছে আছে। এসো আমাদের সাথে।” বাংলা শুনে ওরা দুইজন অবাক হয়ে গেল। এরা বাংলা পারে কি করে?

রোবটদের পিছু পিছু যেতে যেতে ওরা আরেক দফা অবাক হল। ‘মিলিসা’র মত মহাকাশযানের একটা ধ্বংসাবশেষ! এখানে তো ওদের জানামতে কোন মানুষ আসেনি, তাহলে এটা এখানে কি করে এলো?
রোবটরা ওদের একটা বিশাল বাড়িতে নিয়ে গেল। পথে ওরা বারবার লিসানার কথা জানতে চেয়ছে। কিন্তু রোবটরা একটা শব্দও উচ্চারণ করল না। বাড়িটাতে ঢুকে প্রথমেই একটা হল রুম। ওরা দেখতে পেল, ওদের মত কিছু মানুষ। কেউ বসে আছে, কেউ কথা বলছে, হাসছে। আর একটা বিশাল সিংহাসনে, ওদের থেকে দ্বিগুণ উচ্চতারও বেশি একজন বসে আছে। রোবটরা ওদের সিংহাসনের সামনে নিয়ে গেল।  

গমগমে গলায় সেই মানুষটা (ওরা বুঝতে পেরেছিল এরাই নিহিন গ্রহের বাসিন্দা এবং এরা দেখতে মানুষেরই মত) বলল, “আমাদের গ্রহের নাম ছিল এ-এলেভেন। কিন্তু তোমরা আমাদের গ্রহের নাম দিয়েছ, নিহিন গ্রহ। যেহেতু আমি তোমাদের ভাষায় কথা বলছি, তাই তোমাদের দেয়া নামটাই থাক। সুতরাং নিহিন গ্রহে তোমাদের স্বাগতম।” ইয়ুরি প্রথমেই জানতে চাইল, “আমাদের মেয়ে কোথায়?” “ধীরে বন্ধু, তোমাদের মেয়ে আমাদের অতিথিশালায় মানুষদের সাথে আছে। সে ভালই আছে। সেই আমাদের কে তোমাদের কথা বলল। তোমাদের দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে ও।”

“তুমি কে?”, জানতে চাইল উস্পিতা। “ওহো, আমরা তো এখনও পরিচিত হইনি। আমি নিহিন গ্রহের রাজা, সিরিকা। তোমাদের নাম কি?” উস্পিতা আর ইয়ুরি নিজেদের পরিচয় দিল। ওরা বলল, “আমরা পৃথিবী থেকে এসেছি।” সিরিকা বলল, “হ্যাঁ, আমি জানি। পৃথিবীর মানুষরাই এত খুঁতখুঁতে। অন্যের ব্যাপারে নাক গলাতে খুব পছন্দ করে তারা,” বেশ ঝাঁজের সাথে কথা গুলো বলল সে।  

“প্রায় ৫০০ বছর আগেও এরকম পৃথিবী থেকে মানুষ এসেছিল আমাদের নিহিন গ্রহে। তারা ছিল চারজন। দুইজন পুরুষ আর দুইজন নারী। তারা আর কখনো পৃথিবীতে ফেরত যায়নি। নিহিন গ্রহে যারা আসে, তারা আর ফেরত যেতে পারে না।” সিরিকার কথা শেষ হতেই ইয়ুরি বলল, “কিন্তু আমাদের আগে তো কোন মানুষ আসার কথা না। আমরাই প্রথম মানুষ।” সিরিকা বলল, “না, তারা আমাদের সব কথা বলেছে। তাদের ব্যক্তিগত গবেষণাগার ছিল। তারা ছিল খুব বড়লোক এবং বুদ্ধিমান বিজ্ঞানী। আমাদের অস্তিত্ব জানতে পেরে তারা নিজেরাই আগে প্রমাণ পেতে মহাকাশযানে করে এখানে এসেছে। পৃথিবীর কেউ তাদের চিনতো না, তাদের কথা জানতও না। তাই তোমরা জানো না, তাদের কথা। আমরা তাদের কাছ থেকেই বাংলা শিখেছি। আমাদের নিহিন গ্রহে এখন তাদের বংশধররা আছে। তোমাদের মেয়ে এখন তাদের কাছেই।”

“কিন্তু আমরা পৃথিবীতে কেন ফেরত যেতে পারব না?”, জিজ্ঞেস করল উস্পিতা। “কারণ, তোমরা যখন একটা রোবট পাঠালে, তখন থেকেই আমরা আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করেছি। তোমাদের মহাকাশযান আমাদের গ্রহে ল্যান্ড করার সাথে সাথেই এর সাথে পৃথিবীর সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আর তোমাদের রোবটরাও অচল হয়ে পড়ে আছে। সুতরাং পৃথিবীতে তোমাদের ফিরে যাবার সব পথ বন্ধ,” বলল সিরিকা।  

এমন একটা কথা শুনেও উস্পিতা আর ইয়ুরির কোন ভাবান্তর হল না। ওদের মাথায় তখন শুধু লিসানার চিন্তা। “আমরা আমাদের মেয়েকে দেখতে চাই,” ইয়ুরি বলল। “ঠিক আছে,” বলে রোবটদের ডাক দিল সিরিকা। “এদের অতিথিশালায় নিয়ে যাও,” বলল সে।

রোবটদের পিছু পিছু ওরা একটা রুমে গেল। দেখল লিসানা কয়েকটা বাচ্চার সাথে খেলছে আর হাসছে। লিসানাকে এভাবে দেখে ওরা প্রাণে পানি ফিরে পেল। লিসানাও দেখতে পেল ওদের। “মা-বাবা,” বলে চিৎকার দিয়ে লিসানা ছুটে এলো।  ওরা জড়িয়ে ধরল লিসানাকে। লিসানা বলল, “দেখ মা, এখানে আমি কত বন্ধু পেয়ে গেলাম। আমার খুব ভাল লাগছে।” উস্পিতা বলল, “তোমাকে এমন দেখে আমাদেরও ভাল লাগছে, মা।” “আচ্ছা আমি যাই, আমি এখন খেলব। আমার  বন্ধুরা অপেক্ষা করছে।” “ঠিক আছে, যাও তাহলে,” বলল ইয়ুরি।

লিসানাকে ওখানে রেখে এসে আবার বড় হল রুমটাতে ফিরে এলো ওরা। এবার ওদের খেয়াল হল সিরিকা এতক্ষণ ওদের কি বলেছে। পৃথিবীর সাথে ওদের যোগাযোগ বন্ধ! ইয়ুরি এবার সিরিকাকে জিজ্জেস করল, “তোমরা কেন পৃথিবীর সাথে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে?” “কারণ, আমরা শান্তিপ্রিয় প্রজাতি। আমরা নিজেদের মাঝে থাকতে পছন্দ করি। তোমাদের থেকে আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান অনেক উন্নত। আমরা পৃথিবী সম্পর্কে অনেক আগে থেকে জানি। কিন্তু আমরা পৃথিবীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইনা। এখন তোমরা এসেছ, তোমরা ফিরে গেলে ভবিষ্যতে আরও মানুষ আসবে। নিহিন গ্রহ একটা চিড়িয়াখানায় পরিণত হবে। আমরা এটা হতে দিবনা। কিন্তু তোমাদের আমরা কোন ক্ষতি করব না। এখানে তোমরা থাকবে, যা খুশি করতে পারবে। কেউ বাধা দিবে না। আর পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোন লাভ হবে না। কারণ, পৃথিবীর সাথে যে ফ্রিকোয়ন্সি ব্যবহার করে খবর পাঠানো যেতে পারত, সেটা আমরা নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছি।”

উস্পিতার কান্না চলে আসল। পৃথিবীকে আর কখনই দেখতে পারবে না সে!
আর এভাবেই পৃথিবীর সাথে নিহিন গ্রহের বাসিন্দাদের সম্পর্ক স্থাপনের স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেল...। 

Comments

Popular posts from this blog

RC Beam Analysis With ANSYS Step by Step

Algorithm, Heuristic and Metaheuristic

How to Make 'Payesh' in an Easy Way