একদিন রিমঝিম

ক্লিক। ক্লিক। ক্লিক। 
ক্যামেরার শাটার টিপেই চলেছে রিমঝিম। ফুল, গাছ, পাখি, এঁকেবেঁকে চলা নির্জন গ্রাম্য পথ... সবকিছু ক্যামেরায় বন্দি করে রাখছে সে। 

ক্লাস সেভেনে পড়ে রিমঝিম। ছবি তুলতে খুব ভালো লাগে ওর। এই ক্যামেরাটা সে তার জন্মদিনে উপহার পেয়েছে। 

মনের আনন্দে একের পর এক ছবি তুলেই চলছে সে। হঠাৎ করে খেয়াল হল রিমঝিমের... চারদিক খুব নিঝুম। ছবি তোলা বন্ধ করল ও। ভয় পেয়ে গেল। ওর আশেপাশে কেউ নাই। ‘মা, বাবা, কোথায় তোমরা? আমাকে শুনতে পাচ্ছ?’ – বলে কিছুদূর হাঁটল সে। কিন্তু না, কোথাও কেউ নাই। জায়গাটা একটু জঙ্গল মত। বুঝতে পারলো রিমঝিম, পথ হারিয়েছে সে! 

খুব ভয় পেয়ে গেল ও। ছবি তোলার নেশায় সে যে সবার থেকে দূরে চলে এসেছে, এটা খেয়ালই করেনি। চোখে পানি চলে আসলো ওর। একটা গাছের নিচে বসে পড়ল ও। কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পর মাথা ঠাণ্ডা হল। চুপ করে পুরো অবস্থাটা ভাবতে শুরু করল। 
রিমঝিম ওর মা-বাবার সাথে ফ্যামিলি পিকনিকে গ্রামে এসেছে। সাথে ওর কাজিনরাও এসেছে। ঘর থেকে দূরে কোথাও গেলে ওর মা সাথে মোবাইল ফোন দিয়ে দেন। ‘মোবাইল! ইস! এতক্ষণ কেন মনে পড়ল না?’- বলে উঠল রিমঝিম।  ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করল ও। বের করেই হতাশ হয়ে গেল। ‘হায় আল্লাহ! মোবাইলে দেখি নেটওয়ার্কই নাই! এখন কি করব আমি?’ আবার কান্না চলে আসলো ওর। নিজেকে তখন বুঝাল সে, ‘রিমঝিম, তোমাকে এখন কাঁদলে চলবে না। ভাবো কি করা যায় এখন।’ 

এরপরই কথাটা মাথায় আসলো ওর। ক্যামেরা! ক্যামেরায় সে রাস্তার ছবি, চারপাশের দৃশ্য তুলেছিল। এইগুলো থেকে ও কোন ক্লু পেতে পারে, কোনদিক দিয়ে সে এসেছিল। 

ক্যামেরার ছবি গুলো দেখতে থাকল রিমঝিম। ‘এইত, এই যে এই গাছটার ছবি। এখন হাঁটা শুরু করি। আল্লাহ ভরসা!’ কিছুদূর গিয়ে ও পাকা রাস্তা দেখতে পেল। ‘যাক, ঠিক পথেই এগুচ্ছি আশা করি। এই যে রাস্তার আল্পনার ছবিটা। হাঁ, হাঁ, ঠিকই আছে।’ ক্যামেরায় দেখতে দেখতে বেশ কিছুদূর চলে আসলো সে। একসময় থমকে দাঁড়াতে হল ওকে। আর কোন ছবি নাই ক্যামেরায়, সব দেখা শেষ। এবার? 

ঠিক তখুনি রিমঝিম শুনতে পেল, ‘রিমঝিম! রিমঝিম!’ । বুঝতে পারলো এটা মায়ের গলা। মুখে হাসি ফুটে উঠল ওর। ‘মা, মা, আমি এখানে।’- বলে দৌড় দিল ও। একটু এগুতেই রিমঝিম ওর মাকে দেখতে পেল। মা ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন রিমঝিমকে। ‘কোথায় গিয়েছিলি তুই? আমরা কত টেনশন করছিলাম, জানিস?’ এরই মধ্যে রিমঝিমের বাবা আর অন্যরাও চলে এসেছে। সবাই ওকে খুঁজছিল। রিমঝিম খুলে বলল পুরো ঘটনা। ও একটু ভয়ও পাচ্ছিল বলার সময়, কারণ, ওর মনে হচ্ছিল মা ওকে খুব বকা দিবেন, এভাবে একা একা ছবি তুলতে যাবার জন্য। 

ঘটনাটা বলে, মায়ের বকা শোনার জন্য প্রস্তুত হল রিমঝিম। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে মা ওকে বকলেন না। বরং বললেন, ‘যাক তোর বুদ্ধি হয়েছে দেখি! কিন্তু এমন যেন আর কখনো না হয়।’ বাবা বললেন, ‘কোথাও বেড়াতে গেলে দলছাড়া হতে হয় না। মনে থাকে যেন কথাটা।’ রিমঝিম বলল, ‘আচ্ছা বাবা।’ 

রিমঝিমের কাজিনরাও ওর বুদ্ধির প্রশংসা করতে লাগল। আর রিমঝিম মুখে সুন্দর একটা হাসি ফুটিয়ে সবার কথা শুনতে থাকল।

Comments

Popular posts from this blog

RC Beam Analysis With ANSYS Step by Step

Algorithm, Heuristic and Metaheuristic

How to Make 'Payesh' in an Easy Way