সময়ের ভুল

বুয়েটের প্রথম ক্লাস। তাহসান ক্লাসে অন্যদের সাথে বসে আছে। তাহসান ছোটবেলা থেকেই  চুপচাপ। কথা কম বলে। তাই বসে বসে সবার কথা শুনছে। এমন সময় ক্লাসে ঢুকল একটা মেয়ে, দেখেই তাহসান একটা ধাক্কা খেল! মনে মনে ভাবল, ‘এর থেকে আমাকে দূরে থাকতে হবে। নইলে কোনোদিন হয়ত ক্রাশ খেতে পারি!’ তাহসান নিজেই অবাক হয়ে গেলো, এই অদ্ভুত চিন্তা ওর মাথায় আসলো বলে! 

এরপর ক্লাস চলতে থাকে। তাহসান জানতে পারে, মেয়েটার নাম শোভা। শোভা শান্তশিষ্ট মেয়ে হলেও বেশ ফ্রেন্ডলি। তবুও তাহসান অন্য সবার সাথে কথা বললেও শোভার সাথে তেমন কথা বলত না। শোভাকে দেখলে ওর জীবনের প্রথম ভালোবাসার মেয়েটার কথা মনে পড়ে যায়- মিম। তাহসান বুয়েটে চান্স পেলো আর মিম পরিবারের সাথে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমালো। যাবার আগে বলে গেলো, সে আর তাহসানের সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না! মিম কে তাহসান সত্যি সত্যি খুব ভালবাসত। এই ঘটনার পর তাহসানের পুরোপুরি শকটা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লেগে যায়। শুধু ওর কাছের কয়েকজন ফ্রেন্ড এই ঘটনা জানে। 

একদিন তাহসান জানতে পারে, শোভার বয়ফ্রেন্ড আছে- বুয়েটেরই এক বড় ভাই- তামিম ভাই। মনে মনে খুশিই হয় সে! কারণ, শোভার প্রতি একটু সফট কর্নার তৈরি হয়ে গেছে ওর! তাই এটা জানার পর, এবার শোভার সাথে কখনো কিছু সম্ভব না বলে তাহসান ওর সাথে নিশ্চিন্তে মিশতে পারে! শোভা সবার সাথেই কথা বলত। তাহসানের সাথে শোভার বেশি কথা হতো ক্লাস লেকচার এর প্রয়োজনে।  

লেভেল ২, টার্ম ২। তাহসান একদিন আবিষ্কার করলো, শোভা আগের মতো আর হাসে না! মাঝে মাঝেই মন খারাপ করে ক্লাসে চুপ করে বসে থাকে। শোভার কাছের বান্ধবী সিমির কাছে জানতে চাইল তাহসান, ‘সিমি, শোভার কি হয়েছে? সবসময় দেখি মন খারাপ।’ ‘ওহ, তুমি জানো না? শোভার তো তামিম ভাই এর সাথে ব্রেকআপ হয়েছে! তাই ওর মন খারাপ থাকে।’ ‘ও, আমি জানতাম না!’ ‘শোভার সাথে ভাইয়ার বেশ কয়েক মাস ধরেই সমস্যা চলছিলো। এরপর গত মাসে তারা দুইজনই ব্রেকআপের সিদ্ধান্ত নেয়।’ 

শোভার স্বাভাবিক হতে বেশি দেরি লাগে না। পরের টার্ম শুরু হতেই তাহসান আবার আগের হাসিখুশি শোভাকে দেখতে পায়। 

তাহসান একদিন অবাক হয়ে আবিষ্কার করলো, ও মনে মনে যখন কিছু পড়ছে, তখন ওর নিজের কণ্ঠস্বর নয় বরং শোভার কণ্ঠস্বর কানে বাজছে! বুঝতে পারলো, প্রথম ক্লাসে ও যে আশঙ্কা করেছিলো তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে! শোভার উপর ভালোভাবেই ক্রাশ খেয়েছে সে! তাহসান ভাবল, ‘এ আর এমন কি! কয়েকদিন পরই ঠিক হয়ে যাবে!’ কিন্তু দিন যত যেতে থাকে, তাহসানের শোভাকে আরও বেশি ভালো লাগতে থাকে!

লেভেল ৪, টার্ম ১। তাহসানের এখনও শোভাকে ভালো লাগে কিন্তু সে কাউকে বলেনি এই কথা। মনে ভয়, যদি শোভা না করে দেয়! একদিনের ছোট একটা ঘটনায় তাহসানের মনে হয়, শোভাও বুঝি ওকে পছন্দ করে! কিন্তু মনের বোঝার ভুল হিসেবেই এটাকে ধরে নেয় সে! 

মিডটার্মের এক রাতে, বাইরে খুব ঝড় হচ্ছে। তাহসান বসে আছে ফেসবুকে আর গান শুনছে মিফতাহ এর ‘চির অধরা...’। হঠাৎ দেখল, শোভার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ! ‘শোভা ইজ নাউ ম্যারিড উইথ ...’ আর দেখতে পারলো না তাহসান! ওর চোখে পানি চলে আসলো! বাইরের ঝড়ের মতই ওর মনে ঝড় বইছে এখন! শোভার প্রতি ওর ভালোলাগার কথা কাউকে জানায়নি বলে, কষ্টটা নিজেই হজম করার চেষ্টা করতে থাকে তাহসান। এরপর বেশ কয়েকদিন তাহসান ঐ গানটা শুনতে পারল না, শুনলেই সেই সময়টার কথা মনে পরত ওর! 

ক্লাসে গিয়ে জানতে পারলো, শোভার বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেছে। টার্ম ফাইনাল হয়ে গেলে সবাইকে দাওয়াত দিবে সে। 

সিমি, রাইসা আর ইফতির সাথে এখন খুব খাতির তাহসানের। সিমির বাসা সিলেটে। লাস্ট ক্লাসের পর সিমি সিলেটে ওর বাসায় ফ্রেন্ডদের দাওয়াত দিল। তাহসান, রেজা, রাইসা, ইফতি সবাই মিলে গেলো সিমির বাসায়। 

রাতে খাবার পরে সবাই বসে আছে। ‘চল, সবাই মিলে ‘ট্রুথ অর ডেআর’ খেলি!’, বলল সিমি। পানির বোতলটা স্পিন হয়ে রেজার দিকে মুখ করলো। রেজা সিলেক্ট করলো ‘ডেআর’। এরপর আসলো তাহসান। ‘একবার ‘ডেআর’ হয়ে গেছে! এইবার ‘ট্রুথ’!’, বলল ইফতি। ‘ঠিক আছে’, বলল তাহসান। 

‘আমি প্রশ্ন করবো তাহসানকে!’, বলেই জিজ্ঞেস করলো রাইসা, ‘তোর লাস্ট ক্রাশ অথবা ভালোবাসা কে?’ ‘মিথ্যা বলা যাবে না কিন্তু!’, বলল সিমি। তাহসান আমতা আমতা করে বলেই ফেলল, ‘শোভা!’ ক্ষণিকের নীরবতা নেমে এলো সবার মাঝে। সিমি বলল, ‘তুই আমাদের এতদিন বলিসনি কেন রে? তুই কি জানিস, শোভাও তোকে অনেক পছন্দ করত? মনে হয় ভালোওবাসত তোকে!’ এই কথা শুনে তাহসান একটা বিরাট শক পেলো। ‘শোভা এই বিয়েটা করতে চায়নি।’, বলে চলল সিমি, ‘ও চেয়েছিল এসট্যাবলিশ হয়ে তারপর বিয়ে-টিয়ে করতে। কিন্তু ফ্যামিলির চাপে পড়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। তোকে ও কখনো এই ব্যাপারে কিছু বলেনি, কারণ, শোভা আর কোনও রিলেশনে জড়াতে চাচ্ছিল না! ওর মনে ভয় ঢুকে গিয়েছিল, যদি তুই মানা করে দিস! তোরা দুইজনই মনের কথা মনেই রেখে দিলি! তা নাহলে আমরা হয়ত কয়েকবছর পর তোদের বিয়ে খেতে যেতাম!’ রেজা বলল, ‘তুই তো অন্তত আমাকে বলতে পারতি এই কথাটা, তাহসান!’ তাহসান কিছু বলতে পারে না, মাথা নিচু করে বসে থাকে। আর ভাবে, ‘সময়ের হিসাবে একটু ভুল হয়ে গেলো! এই কথাটা যদি আরো আগে জানতাম অথবা সাহস করে একবার শোভাকে বলেই ফেলতাম মনের কথা, তাহলে আজ গল্পের উপসংহারটা হয়ত অন্যরকম হতো!’ 

Comments

Popular posts from this blog

RC Beam Analysis With ANSYS Step by Step

Algorithm, Heuristic and Metaheuristic

How to Make 'Payesh' in an Easy Way